Head


 -- ভাবি দরজা বন্ধ করলেন কেনো। (আমি)

-- আজ আমি তোকে একটা উপহার দিব,তাই।

-- তাই, তা কি উপহার দিবে আমার প্রিয় ভাবি টা।

-- তোকে এমন জিনিস দিব তুই কল্পনাও করতে

পারবি না।

-- তাই বুঝি, আমার ভাবি তো দেখছি আমাকে অনেক

ভালোবাসে।

-- হুম্ম। তার জন্যেই তো এই দিনটার অপেক্ষা।

-- ভাবি তাহলে তারা তারি দেন আমার আর তর সইছে

না।

-- আরে দারাও দারাও এত তারা কিসের। তার আগে বল

যেটা দিব সেটা কিন্তু কাউকে বলা যাবে না।

-- আচ্ছা ঠিক আছে।

-- এবার ভাবী তার কাপড় খুলতে শুরু করতে ধরল।

-- আমি সাথে সাথে চিৎকার দিয়ে বললাম ভাবি এটা কি

করছেন।

-- তোকে আমি আমার সবচেয়ে বড় উপহার টা

দিচ্ছি, কেন তুই নিবি না।

-- তাই বলে কাপর কেন খুলতেছেন।

-- আরে বাহ কাপড় না খুললে কিভাবে দিব।

-- ভাবি আপনি আসলে কি চাচ্ছেন বলুনত।

-- আমি চাচ্ছি তুই আমাকে আজ এমন কিছু দিবি যাতে

আমি মা হতে পারি।

-- না ভাবি, এটা কখনই হতে পারে না, আমি ওই রকম

ছেলে না ভাবি। আপনি ভালো করেই জানেন। আর

এটা আমি আপনার কাছে আশা করিনি। (আমি)

আপনাকে অনেক ভালোবাসি , কিন্তু এভাবে নয়।

একটা বোনের মত করে ভালোবাসি আপনাকে।

-- আমি এত কিছু শুনতে চাইনা তোর কাছ থেকে৷

তুই আমার ইচ্ছা পুরন করবি কিনা বল।

-- না ভাবি, এটা আমি কখনই করতে পারব না। মরে

গেলেও না। আপনার যা করার আছে আপনি করেন।

-- নিলয়, তুই কি ভুলে গেছিস। আমি যেটা চাই সেটা

পেয়েই ছাড়ি। আর না পেলে আমি সব কিছু ছাড় খাড়

করে দেই।

-- ভাবি আমি কোন কিছুর ভয় করিনা। আপনি নিশ্চয়ই

ভালো ভাবে জানেন আমি এরকম কাজ কখনোই

করবনা, মরে গেলেও না। হে ঠিক আছে, আমি

একটু আধটু খারাপ কাজ করি। তাই বলে আমি এত বড়

খারাপ কাজটা করতে পারব না।।।।।

-- চুপ, অনেক হয়েছে আমি শেষ বারের মত

বলতে চাই আমার প্রস্তাবে রাজি হয়ে যা।।। না হলে

তোর কপালে দুঃখ আছে। তুই কিন্তু ভাল করেই

জানিস আমি যত ভালো তত খারাপ। আর তুই বুঝার

চেস্টা কর এতে দুইজনেরই ভালো, আমার সংসারটাও

বেচে যাবে। আর তুই মজাও পাবি৷।। আর তুই যখন

চাইবি আমার কাছে আসবি, বাধা দিব না।

-- ছি ভাবি ছি , আপনার এসব কথা বলতে একটুকুও

লজ্জা লাগতেছে না। আপনি সংসার বাচানোর জন্য এটা

করছেন, ছি: । আপনার লজ্জা হওয়া উচিৎ। আপনার স্বামি

আপনাকে কত ভালোবাসে আর আপনি, ছি:। বাড়ির

কেউ যদি এসব কথা জানতে পারে আমি,আপনি তখন

তাদের সামনে মুখ দেখাব কিভাবে, ছি ভাবি। (আমি আর

সহ্য করতে পারলাম না।আমারি চোখ দিয়ে পানি বের

হয়ে আসল। )


আমি আর একটা কথাও না বলে কাদতে কাদতে দরজা

খুলে বাইরে চলে আসলাম। আসলে আমার কিছু

সয্য হচ্ছে না এখন। আমার প্রিয় ভাবিটা আমার সাথে

এরকম করতে পারল। । আমারে নিজরই খুব লজ্জা

হচ্ছে এখন।।।।


তিনি আমার নিজের ভাবি না। আমার চাচাতো ভাইয়ের

স্ত্রী। আমার কোন ভাই নাই, তাই চাচাত ভাই

ভাবীদের খুব সন্মান দেই। নিজের মনে করি।।।

কিন্তু আজ যা ঘটল, আমি নিজেকে এখনো বিশ্বাস

করতে পারছি না।


আমি ওরকম ছেলে নই। আমি জানি একটা সম্পর্ক

টিকিয়ে রাখা কত কঠিন। এসব অবৈধ সম্পর্কের কথা

প্রতিদিন শুনা যায়। এসব অবৈধ সম্পর্কের ফলে

আমাদের সমাজ আজ ধংসের পথে।


আমিও একটা মেয়েকে খুব ভালবাসি।তাই আমি জানি

ভালোবাসা টিকিয়ে রাখা কত কঠিন। তাই মেয়েদের

খুব সম্নান দিয়ে চলি। আর এই সন্মান দেয়াটা আমার

ভালোবাসার মানুষটিই আমাকে শিখিয়েছে।


সেই ভালোবাসার মানুষ টা আর কেউ নয় সেও

আমার নিজের চাচাতো বোন রাইশা। সেও আমাকে

প্রচন্ড ভালোবাসে।


আমি জানি ভাবীর এই চাওয়াটার কারন কি। ভাবির বিয়ে

হয়েছে ৪ বছর হল। এখনও তার কোন বাচ্চা হয় নি।

তিনি অনেক ডাক্তারের সংগে যোগাযোগ

করেছেন। তবুও কাজ হয়নি। সমস্যা টা নাকি আমার

ভাইয়েরই। তাদের মধ্যে একটা মধুর সম্পর্ক

রয়েছে। এখন সেই সম্পর্ক টা তে ধিরে ধিরে

ফাটল ধরতেছে,বেবি না হওয়ার জন্য।। কিন্তু ভাবি চায়

না সেই ফাটল টা আরোও বড় হতে। তাই হয়ত

আমাকে এভাবে নিয়ে গিয়ে এরকম করল। কিন্তু

আমি এটা আশা করি নি ভাবির কাছ থেকে। বাসায় আজ

কেউ নেই সবাই গেছে বিয়ে বাড়িতে, ভাবি

আমাকে যেতে নিষেধ করেছিল তাই আমিও যাই নি।

এখন বুঝলাম ভাবি আমাকে কেন যেতে দিল না। আমি

আর সহ্য করতে পারছি না, কিছুক্ষন আগে ঘটে

যাওয়া ঘটনাটা আমাকে দারুণ ভাবে আঘাত করছে ।


আমি বাসায় এসে সুয়ে সুয়ে ভাবতেছি, ভাবি আমার

সাথে এটা কি করল৷ কেন করল। তার সাথে থাকা এত

ভালো সম্পর্ক টা আজ শেষ হয়ে গেল।।।শেষ

যদি এখানে হত, তবু্ও মনে হয় আমার জীবন টা ভালই

যেত। কিন্তু এই ঘটনা টা এত বড় ভাবে গড়াবে আমি

বুঝতে পারিনি।


বিকেলের দিক বাবা মা চাচা চাচি সবাই আসল বিয়ের

দাওয়াত খেয়ে। সবাই একসাথে বাড়ির বাইরে বসে

গল্প করতেছে, বাড়ির ভিতর খুব গরম।।আমিও

তাদের সাথে বসে আড্ডা দিচ্ছি মন ভালো করার

জন্য। আর মনে মনে ভাবতেছি ভাবিকে ভালো

কিছু একটা উপহার দিব, আর তাকে আবার নতুন করে

বুঝাব, যে আপনি যেটা করতেছেন সেটা সম্পুর্ণ

ভুল।। এটা হয় না।তার আর আমার সম্পর্ক টা নতুন করে

জোড়া লাগাব। কিন্তু সেই সুযোক টা আর পেতে দিল

না।


এসব কথা ভাবতে ভাবতেই, এমন সময় ভাবি কাদতে

কাদতে আসল। এসে সবার সামনে কিছু ছেড়া জামা

আর কাপর বের করে বলল, আমি নাকি তার সাথে

অবৈধ সম্পর্কে জড়াতে চেয়েছি। আমি তাকে

বলেছি আমি তাকে মা বানাতে সক্ষম হব।আর যা যা

মিথ্যা বলার ছিল সব বলে দিল।


এদিকে সবাই তার কথা বিশ্বাস করে নিল। আমি বার বার

বলছিলাম এসব মিথ্যে, এসব মিথ্যে। কিন্তু কেউ

বিশ্বাস করল না। কিভাবেই বা বিশ্বাস করবে, বিশ্বাস না

করার অনেক কারন ছিল। তার মধ্যে একটি হল, একদিন

আমি বন্ধুদের পাল্লায় পরে একটা মেয়েকে

ইভটিজিং করেছিলাম ।তারপর মেয়েটি এসে আমার

বাবাকে বলে দেয়,, সেদিন আব্বু আমাকে হেব্বি

কেলানি দেয়। তখন থেকে আমি আব্বুর কালো

তালিকায় পরে যাই।

আর তাছাড়া ভাবির সাথে আমার একটা মধুর সম্পর্ক ছিল।

ভাবির কাছে আমি প্রিয় ছিলাম, এটা বাড়ির সবাই জানত।

আর সেই প্রিয় মানুষ টা যদি এই ভাবে অভিযোগ

করে তবে কে না বিশ্বাস করবে।।।।


তাই ভাবির বলা কথা গুলো আব্বু আম্মুরও বিশ্বাস হয়ে

গেল। আমি হাজারো বার বললাম আমি এসব করিনি,

উল্টো ভয়ে সব সত্যি বলে দিলাম, কিন্তু কেউ

আমাকে বিশ্বাস করল না।


ভাইয়া আমার দিকে অগ্নি চোখে তাকিয়ে আছে।

আব্বু আছে বিধায় আমাকে কিছু বলতে পারতেছে

না বা মারতে পারতেছে না।


সবাই সুধু আমার দিকে তাকিয়ে আছে, যেন আমার

বলা কথা গুলো কেউ বিশ্বাসই করতে চাচ্ছে না।


অতঃপর বাবা এসে আমায় ঠ্যাস ঠ্যাস করে এলোপাথারি চর

মারলেন।আমার মাথা ভন ভন করছিল। আমার মুখ দিয়ে

আর কোন কথা বের হচ্ছিল না। আব্বু বললেন

আজ থেকে তুই আমার ছেলে না এই মুহূর্তে

আমার সামনে থেকে বাড়ি থেকে বের হয়ে যা।

এসব ছেলেদের তো বাড়ি থেকে বের করে

না দিয়ে পুলিশকে দেয়া উচিত। আবার অন্য কোন

মেয়ের ক্ষতি করবে।,

আমি ভাবতে পারিনি আব্বু এরকম একটা কথা বলবে।

মুখ দিয়ে কথা বের হওয়া না সত্তেও বললাম বাবা আমি

এসব করিনি।

কে তোর বাবা। খবরদার আমাকে আর বাবা বলবি না।

আমি আর কোন কথা শুনতে চাই না। তুই এই মুহুর্তে

আমার সামনে থেকে চলে যা না হলে এর ফল

ভালো হবে না কিন্তু।


এবার আমি বাবা কে ছেড়ে মায়ের কাছে গেলাম,,

মাও মুখ ফিরিয়ে নিল।। আমি মনে মনে বলতেছি মা

তুমিও আমাকে বিশ্বাস করতে পারলে না ।।।এভাবে

চাচা চাচি, ভাই বোন সবার কাছে গেলাম সবাই মুখ

ফিরিয়ে নিল।


অবশেষে ভাবির কাছে গিয়ে বললাম, ভাবি এত বড়

ভুলটা আপনি করতে পারলেন। আমার ভাবতেও খুব

কষ্ট হচ্ছে।।


এত দিন জানতাম দেবর ভাবির জন্য মৃত্যু স্বরুপ(আল

হাদিস)।

আজ সত্যি সত্যি দেখলাম ভাবি দেবরের জন্য মৃত্যু স্বরুপ।


অতঃপর বাধ্য হয়ে রাস্তা ধরতে হল।।। রাস্তা দিয়ে

হাটতেছি আর ভাবতেছি ভাবি এমনটা না করলেও পারত।

তিনি তার ওয়াদা পুরন করেই ছারলেন।তিনি আবার প্রমান

করে দিলেন তার চাওয়া পুরন না হলে তিনি সব কিছু ছাড়

খার করে দেন।


সামনে দেখতে পেলাম রাস্তার ধারে রাইশা দাড়িয়ে

আছে। দৌড়ে তার কাছে গেলাম তার হাত দুইটা ধরে

কাদতে কাদতে বললাম তুই তো আমাকে বিশ্বাস

করিস, তুই আমার আব্বু কে বুঝানা আমি কিছু করিনি।

বলনা।

--বিশ্বাস, বিশ্বাস তো অনেক আগেই

উঠেগিয়েছিল। যখন ভাবির সাথে তোর মেলামেশা

দেখতাম। আর আজ তো নিজের চোখে

দেখলাম।

-- এই পাগলি তুই এসব কি বলতেছিস। বলনা আমি এরকম

না, বলনা।।।

-- ছি, তোর মত ছেলের মুখের দিকে তাকাতেই

আমার লজ্জা হচ্ছে ছি.. আরে আমিতো তোর মত

ছেলেকে ভালোবেসে ভুল করেছি। আমার কি

কম ছিল যে তুই এই রকম একটা কাজ করলি, ছি।তোর

যদি এতই ইচ্ছা ছিল, আমাকে বলতি বিয়ের আগে

আমিই সব কিছু দিয়ে দিতাম।।৷ চলে যা আমার

চোখের সামন থেকে।

-- তুইও আমাকে বিশ্বাস করতে পারলি নারে,,, এই

ভালোবেসেছিলি আমায়।


এই বলে চলে আসলাম, দুই চোখের পানি ঝর ঝর

করে পরতেছিল, চাইলেও আর আটকাতে পারছিলাম

না। এখন রাস্তা মাপা ছাড়া আর কোন উপায় নেই আমার

হাতে।।।


আছে নানুর বাড়ি আছে। কিন্তু এই মুখ নিয়ে আর

নানুর বাড়ি যেতে চাই না। সেখানে গেলেও হাজার

প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে।


পকেটে বেশি টাকা নেই, শুধু 500 টাকা আছে।

সাথে ছোট মোবাইলটা নিয়ে এসেছিলাম, কোন

sim ছিল না, শুধু গান সুনতাম।ভাবতেছি এই শহর ছেড়ে চলে যাব।

একটা বাসে করে চলে আসলাম।

যেতে যেতে সব টাকা শেষ হয়ে গেছে।


খুব খুদা লাগছে। পকেটে আর এক টাকাও নেই।

অবশেষে পাশে থাকা পুকুরের পানি পান করলাম।।


জানি না জীবন এ কোন ভুল করেছিলাম, যার শাস্তি

আজ পেতে হচ্ছে। চার দিক থেকে সব আতংক

যেন আমাকে গ্রাস করে ধরেছে। আমার কিছু

করার নেই,, কিছুই করার ছিলনা। আমি হয়ে গিয়েছিলাম

নিরুপায়।


তার পরেও ভেবে ছিলাম সব কিছু একদিন ঠিক হয়ে

যাবে।

এসব ভাবতে ভাবতে ক্লান্তের মাঝে কখন ঘুমিয়ে

গেছি মনে নেই।

সকাল হয়ে গেছে। আমি এক মাঠের মাঝে সুয়ে

ছিলাম। খুব খিদা লাগছে, এ খুধার ব্যাথা যেন সহ্য করার

নয়।তার পরেও, একটু সকাল হতে আশে পাশে ইট

ভাটা খুজতে লাগলাম। কিছু তো করতে হবে, না

করলে টাকা পাব কোথা থেকে।


ভাটার মেনেজারের সাথে কথা বললাম, তিনি আমাকে

কাজে নিবেন না। অনেক জোড়া জুড়ি করার পর

বলল যদি ভালো করে কাজ করতে পারি তাহলে টাকা

দিবে আর না হলে দিবে না। আমি রাজি হয়ে গেলাম।


আমকে বলল ইট বানাতে হবে। কাজ শুরু করে

দিলাম। ইট বানানো সহজ কাজ নয়। ৫০ টা ইট বানাতে

আমি খুব ক্লান্ত হয়ে গেলাম। এই কয়টা ইট বানাতে

বানাতে দুপুর হয়ে গেল।।


সবাই তাদের নিয়ে আসা খাবার খেতে গেল। আর

আমি এদিকে বসে আছি। আমার বার বার মনে হচ্ছিল

আমাকে কেউ একজন বলুক বাবা খাবার নিয়ে আসনাই।

আসো আমারা ভাগাভাগি করে খাই। না, কেউ বল্লনা।

আমি খুবই ক্লান্ত। অজ্ঞান হবার মত অবস্থা। তবুও

কারো কাছে হাত পাততে ইচ্ছা করছে না। বার বার

মনে হচ্ছিল, একটু কাদা খেয়ে নেই, কিন্তু তাও

আমার দাড়া সম্ভব হল না। অবশেষে ইট তৈরিতে

ব্যবহৃত পানি খেয়ে নিলাম।।।


সারাদিনে মাত্র ১৫০ টা ইট বানালাম। সন্ধ্যা হয়ে

এসেছে। মেনেজার সবাইকে ৩০০ করে টাকা

দিল। আমাকে ২০০ টাকা দিয়ে বলল কাল থেকে না

আসতে। যে যার বাড়ি চলে গেল।


আমি একটা বাজারে গিয়ে ৫০ টাকার খাবার খেলাম।

হাতে ফোস্কা পরেছে তাই খেতেও কষ্ট

হচ্ছে।এখন বুঝতেছি জীবন কতটা কঠিন। আর ১০০

টাকা দিয়ে একটা sim কিনলাম। আর ৫০ টাকা রাখলাম

ভবিষ্যতের জন্য।


নতুন sim কিনে আমার এক বন্ধুকে ফোন দিলাম।

যার বাড়ি আমাদের বাড়ির পাশেই।আমার ছোট বেলার

বন্ধু। একই সাথে পরি। তার নাম্বারে ফ্লাক্যিলোড

দিতে দিতে তার নাম্বারটা মুখস্ত হয়ে গিয়েছিল।


তাকে ফোন দিতেই, সে ফোন ধরল।।

-- তাকে আমি সালাম দিলাম।

-- সে মনে হয় বুঝতে পেরেছিল,এটা আমি সাথে

সাথে হাউ মাউ করে কেঁদে দিল। আর বলল আমি

জানি তুই এরকম কাজ করবি না। কেমন আছিস রে।

(যেখানে কাঁদার কথা আমার, সেখানে সে কেঁদে

দিল। আসলে বন্ধুর সমতুল্য কেউ হয় না।)

--আমি ভাল আছি রে তুই কেমন আছিস, বাড়ির সবাই

কেমন আছে রে।

-- সবাই ভাল আছে রে। ওরা তো সুখে থাকবেই।

এ তোর কাছে টাকা পয়সা আছে তো। ঠিক মত

খাওয়া দাওয়া করিস তো। টাকা লাগলে আমাকে বলিস

বিকাশ করে দিব।


এবার আমিও সত্যি সত্যি কেঁদে দিলাম। সাথে সাথে

ফোনটাও কেটে দিলাম।


বার বার চিৎকার করে বলতে ইচ্ছা হচ্ছিল, হে আল্লাহ

আমার সাথেই কি এটা হওয়ার ছিল।


আজকের আকাশটা খুব খারাপ। বাতাস হচ্ছে। মনে হয়

বৃষ্টি আসবে। তাই আজ মাঠ ছেড়ে অন্য কোথাও

গেলাম ছাউনির মত কোন জায়গায়।


খুজতে খুজতে পেয়ে গেলাম, একটা বিল্ডিং। নতুন

বিল্ডিং হচ্ছে এর কাজ চলতেছে। সেখানে সুয়ে

পরলাম। রাতে হেব্বি বৃষ্টি হচ্ছিল। আজ সারারাত মশার

জন্য ঘুমাতে পারলাম, না।


পরের দিন সকাল হতেই আবার কাজ খুজতে গেলাম।

আজ আর কাজ পেলাম না। ভাবতেছি এই ৫০ টাকা ভাড়া

দিয়ে একটা রিকশা চালাবো। কিন্তু আমি তো রিকশা

চালাতে পারি না। তারপর অন্য কাজ খুজার চেষ্টা করলাম৷

কিন্তু আজ আর পেলাম না।


অতঃপর ওই ৫০ টাকার কিছু টাকা দিয়ে খুদা নিবারন করলাম।

এখানে আমার কষ্ট দেখার মত কেউ নেই।

সবাই চলে নিজের গতিতে।


এভাবেই চলল এক বছর।

এই এক বছরে সামান্য তম পরিবর্তন বা উন্নতি হল না,

আমার দিন দিন যেন অবনতিই হচ্ছে। আগের

থেকে খুব কালো হয়ে গেছি।। প্রতিদিন পুকুর

নদীর ময়লা পানিতে গোসল করতে হয়।।।।জামা

কাপর ছিল না যে কাপড় বদলাবো। গায়েই কাপড়

শুকাতে হয়। কিছু

করার ছিল না আমার। কারো বাসায় আশ্রয় ও পাই নি।।

কাজের লোক হিসেবে ও অনেকে রাখেনি।


প্রায় বন্ধুটার সাথে কথা হয়। তাকে বলতে নিষেধ

করেছিলাম যেন বাড়ির কেউ না জানে তার সাথে

আমার কথা হয়। সে আমাকে বলে, বাড়ির কেউই নাকি

আমার কথা তোলে না। এটা শুনতে আমার খুব কষ্ট

হয়। বুকটা ফেটে যায়। ,


আজ বিকালে আমাকে আমার বন্ধু ফোন দিয়ে

বলল আজ নাকি রাইশার বিয়ে। কথাটা শুনা বুকটা কেপে

উঠল। আমাকে ছাড়া ভালোই আছে পাগলিটা। আজ

সে অন্য কারো হবে। ভাবতেই চোখ বেয়ে

পানি পরল। কিছুই করার নেই আমার। তার পরেও বন্ধুর

কাছ থেকেই এক প্রকার জোড় করেই নিলাম ভাবির

নাম্বার টা। শুনেছি ভাবি নাকি এখনও ভাইয়ের সাথেই

থাকে ওই বাড়িতে, ওই ঘটনার পর থেকে নাকি ভাইয়া

তাকে আরও আপন করে নিছে। যদিও এখনও

তাদের বাচ্চা হয়নি।।


মোবাইলে টাকা নেই, আমি তিন দিন থেকে কাজে

যেতে পারিনি। খুব অসুস্থ আমি। এখনও আমাকে

রাস্তার ধারে থাকতে হয়। সন্ধ্যা হয়ে গেছে।

আমার হাতে ২০ টা টাকা , ভাবতেছি এই টাকা দিয়ে খুদা

নিবারন করব নাকি ফ্লাক্সি লোড দিব। এপাশে আমি

খুধায় কাতর আর অপাশে রাইশা আর পরিবার হারানো

ব্যাথা। তার পরেও খুদার ব্যাথা কে চাপা দিয়ে

মোবাইলে টাকা ঢুকালাম।


রাত আট টার দিকে,

আমি এক খোলা মাঠের মধ্য খানে বসে আছি।

হয়ত বিয়ে শুরু হয়ে গেছে। হয়ত ভাবি আজ খুব

ব্যাস্ত রাইশাকে সাজাতে।। তার পরেও ফোন দিলাম,

সেই প্রিয় ভাবিটাকে।।। কয়েকবার ফোন দিলাম ফোন ধরল

-- কেমন আছেন ভাবি।।।(আমি)

-- কে বলছেন।?

-- এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেলেন ভাবি।

-- কে নীল ??

-- হ্যা ভাবি। কেমন আছেন।।

-- সাথে সাথে চিৎকার দিয়ে বলল , নীল তুই এখন

কই,, তোকে আমি অনেক কষ্ট দিছি। আমি অনেক

ভুল করেছি তুই ফিরে আয়।।। আমি আমার পাপ সবার

সামনে বলেদিব, তুই ফিরে আয়।আমার খুব কষ্ট

হচ্ছে তোকে না দেখে।।আমি রাগের বসে

এসব করে ফেলেছি।।। তুই চলে আয়।।।( ভাবি

কাদতে কাদতে বলতেছেন)

-- সেই সুজুক আর নাই ভাবি। ভাবি আমি তিন ধরে না

খেয়ে আছি ভাবি। ভাবি আর মনে হয় না আমি বাচব ।।।

খুব কষ্ট হচ্ছে ভাবি। খুব কষ্ট হচ্ছে।

-- তুই তাড়াতাড়ি বল কোথায় আছিস, আমি তোকে

গিয়ে নিয়ে আসব তারাতাড়ি বল।

--ভাবি আমি অনেক দূরে আছি ভাবি। আর

কিছুক্ষণের মধ্যে মনে হয় অজানা দেশে চলে

যাব। ভাবি আমি সয্য করতে পারছিনা ভাবি। আমাকে ক্ষমা

করে দিয়েন ভাবি। ভাবি আমি আপনাকে এখনও

ভালোবাসি একটা বোনের মত করে। কেন জানি না

আপনার প্রতি আমার ঘৃণা টা আসে নি ভাবি। ভাবি আমার

জীবনের শেষ ইচ্ছাটা রাখবেন ভাবি।

-- আমি আর কোন কথা শুনতে চাই না। শুধু বল

কোথায় আছিস।

-- ভাবি সেটা জেনে আর কি হবে ভাবি। বলেন না

আমার ইচ্ছা টা পুরন করবেন কিনা।

-- বল।(কেঁদে কেঁদে)

--ভাবি আমার আব্বু আম্মুকে বলবেন আমাকে যেন

ক্ষমা করে দেয়।।আর আমার ঘরের পড়ার

টেবিলের ড্রয়ারে একটা উপহার রেখেছিলাম রাইশা

কে দেয়ার জন্য কিন্তু তা আর দিতে পারিনি, জানি না

ওটা এখন আছে কিনা। ওটা পাইলে রাইশাকে দিয়ে

দিয়েন, বলার দরকার নেই কে দিছে।। আর সত্যটা

গোপন রাখিয়েন,আমাকে ভালোবাসার খাতিরে ।

কাউকে বলিয়েন না, এটা বললে আপনার জীবনটাও

নষ্ট হয়ে যাবে।ভাবি পারলে আমার ভুল ত্রুটি গুলো

ক্ষমা করে দিয়েন। আর পারলে সবাইকে আমার

অগ্রিম মৃত্যুর সংবাদ দিয়ে দিয়েন। ভালো থাকিয়েন


ঠিক সেই মুহুর্তে মোবাইল বন্ধ হয়ে গেল, চার্য

শেষ। জীবনের তো সব শেষ হয়ে গেছে

আর তুই বাকি থাকিস কেন।।

অনেক কান্না করেছি, এখন অনেক ঘুম পাচ্ছে

আমার, এ ঘুম যেন আর জাগার নয়। এই ঘুম যেন

জীবনের শেষ ঘুম। এখন কেন যানি মরতেও ভয়

হচ্ছে, যানি না পরকালে আল্লাহ আমার জন্য কোন

শাস্তি অপেক্ষা করে রাখছে। তার তো কোন

গোলামিই করি নাই।তারপরেও চোখকে আটকে

রাখতে পারলাম, জানি না পরের দিন এই চোখ দুটো

খুলবে কি না।।।।



Post a Comment

Previous Post Next Post